অপেক্ষা শব্দের শাব্দিক অর্থ তেমন দীর্ঘ নয়। প্রতীক্ষা, আশা, প্রত্যাশা মানেই নাকি অপেক্ষা! কারো কারো মতে, কিছু পাওয়ার আশায় বা প্রত্যাশায় সময় ব্যায় করার নামই হয়ত অপেক্ষা। এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে ধৈর্য ধারণ করা। পবিত্র কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন , তিনি ধৈর্যশীলকে পছন্দ করেন।
কিন্তু বাস্তব জীবনে আমাদের পক্ষে কতটা সম্ভব অপেক্ষা করা? ৩টি অক্ষরের ছোট এই শব্দ কতটা দীর্ঘ এটা ভাবলেই হয়ত একটা ভীতি চলে আসে। কেউ অপেক্ষা করে জীবনের উন্নতির জন্য আবার কেউ অপেক্ষা করে তার প্রেয়সীর জন্য। তবে অপেক্ষা সেটা যার জন্যি হোক না কেন , অপেক্ষার মতো কঠোর শব্দ আমার হজম হচ্ছে না। শব্দের দৈর্ঘের মতো করে এর ফলফালকেও গতি প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি ঈশ্বরের কাছে।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে কেউ কেউ বলেছেন,
‘’এই ভূবনে কিছু না পেলে, তার আশায় থাকার নামই হচ্ছে অপেক্ষা।‘’
আবার অন্য কেউ বলেছেন,
‘’কিছু না পাব না জেনেও তার জন্য প্রতীক্ষার অপর নামই হচ্ছে অপেক্ষা।‘’
জীবনে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে থাকি আমরা , তবে আমার মতে সঠিক সময় বলতে কিছুই নেই। সব সময়ই সঠিক। শুধু আমাদের পদক্ষেপ আর একটু সাহসের প্রয়োজন । সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে আমরা শুধু সময়কে বিসর্জন দিচ্ছি।
সাহিত্য আমি একটু কমই বুঝি। তবুও কিছু কিছু লেখক আমার মন কেড়ে নিয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদ তার “অপেক্ষা” উপন্যাসে বলেছেন,
‘’মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপেক্ষা নামের ব্যাপারটি খুব প্রয়োজন। অপেক্ষা হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার টনিক।খুব খারাপ সময়ের পরপরই খুব ভাল সময় আসে। এটা জগতের নিয়ম।প্রকৃতি যাকে দেবার তাকে উজাড় করেই দেয়। যাকে দেবার না তাকে কিছুই দেয় না।‘’
মানুষ বেঁচে থাকে আশায়। আর আশা নিয়ে বেঁচে থাকার অপর নামই নাকি অপেক্ষা। অপেক্ষায় আমাদের ইচ্ছাই প্রকাশ করে আমরা আসলে সেটা কতটা চাই। এই জন্যই ‘জয়ে মেয়র’ বলেছেন,
“অপেক্ষা করার ক্ষমতাকে ধৈর্য বলে না, বরং ধৈর্য হলো আমরা অপেক্ষার সময় কেমন ব্যাবহার ও মনোভাব রাখি।“
তবে আমার মতে, অপেক্ষাকে কখনোই অভ্যাসে পরিণত হতে দেয়া ঠিক না, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা ও ঝুঁকি নেয়াতেই জীবনের স্বার্থকতা। নিজের জীবনের গতিকে অপেক্ষায় রাখা ঠিক না । জীবনকে তার গতিতে চলতে দেয়া উচিত । কিছু না পাওয়া থেকে হেরে যাওয়ার গল্প রচনা হয় না। শুরু হয় নতুন এক উপন্যাসের পাতা। আর এই উপন্যাসের কোনো এক অধ্যায়ই রচিত হয় আমাদের প্রাপ্তি ও সফলতার গল্পে।
লেখাঃ সিফাত আল সাদ