Dowry: বিয়ের নামে প্রতারণা ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
মাত্র কয়েক মাসের প্রেম, বিয়ের জন্য প্রস্তুত দুজনেই, যেন লাইলী মজনুর প্রেম। যদিও তাদের পরিবারের কেউ এই বিয়েতে রাজি নয়। এরই মধ্যে দুজনেই কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলে এরশাদ সরকারী গবাদী পশু খামারের অংশ ছাগলের খামারে মাষ্টার রোলে চাকুরী করে। মেয়ে স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করত। উভয়জনের সিদ্ধান্ত পরিবার ছাড়াই দুজনে একে অপরের জীবন সঙ্গী হবে।
সকল বিষয় প্রস্তুত, কিন্তু কোর্ট এফিডেভিট করবে বলে গার্মেন্টসের গেইটে গিয়ে স্ট্যাম্পে জনৈকার কাছ থেকে সাক্ষর নেই। এতেই চলতে থাকে গোপনে সংসার, বিষয়টি মানুষের কানাঘোষা শুরু হলেই মেয়ের ঘর থেকে পরিবারের সামনেই এরশাদ হাত ধরে টানাহ্যাঁচড়া করে তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে।
তৎকালীন সময় এরশাদের পিতা ও মাতার সামনে স্থানীয় এক মুরুব্বী নিজেই (আকদ) বিয়ে পড়িয়েছে বলে দাবি করেন, যদিও তিনি আলেম বা হাফেজ কিছুই নয়। তবে সেই কথিত হুজুর বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, এরশাদের পরিবার হঠাৎ রাত ১২টার দিকে আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে একটু দোয়া করিয়ে দিতে। আমি দোয়া করেছি শুধু, কোন বিয়ে পড়াইনি।
তবে বিয়ে নিয়ে কানাঘোষা চললে এরশাদ নিজের ঘর ছেড়ে তখন পৌরসভার চন্দ্রপুর নির্জন এলাকায় বসতঘর তৈরী করে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর সংসার করে আসছে। তাদের ঘরে ১কন্যা সন্তানও রযেছে। কিন্তু প্রেমের কারনে জনৈকা ঘর ছাড়লেও দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর বাপের বাড়ীতে যাইতে পারেনি স্বামী এরশাদের বাঁধার কারনে। এমনকি গত দেড় বছর আগে বাবা মারা গেলেও তার মুখ পর্যন্ত দেখতে দেয়নি প্রতারক এরশাদ এমনি অভিযোগ স্ত্রীর। গত দুই মাস আগেও বিষপানের চেষ্টা করেছে আত্মহত্যা করতে।
ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার আদর্শগ্রামের শাহাদাত হোসেনের পুত্র এরশাদ ভূঁইয়া(২৮)ও একই এলাকার মৃত আবুর মেয়ে জনৈকার সাথে। এ বিষয়ে প্রতারক এরশাদের বিরোদ্ধে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জানান, প্রেম করে ঘর ছেড়েছি ভালবাসার প্রিয় মানুষকে নিয়ে সুখের জীবন কাটাতে। কিন্তু এভাবে আমাকে ঠকাবে বিয়ের নামে প্রতারনা করবে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বিয়ের কাবিননামা করবে করবে বলে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পার করেছে। একজন হুজুরের কাছে নিয়ে বিয়েও পড়াইনি। কৌশলে প্রতারনা করতে কথিত এক ব্যক্তিকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা বিয়ে পড়িয়েছেন। গত এক বছর ধরে আমার বিয়ের স্বীকৃতি চাইলে আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে এরশাদ। আসে পাশে কোন বাড়ী ঘর ছিলনা যে দৌড়ে কারো বাড়ীতে আশ্রয় নেব। এভাবেই নির্যাতন সহ্য করে করে সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছি। এরশাদের ডেইরী ফার্মে চাকুরী সরকারী করতে ২লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা নাকি আমার পরিবার থেকে নিয়ে আসতাম। এগুলো বলে বলেও নির্যাতন করত। টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেবে। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, তাকে কিছু করতে পারবেনা বলেও হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী আরো বলেন, আমি গরীব ঘরের মেয়ে, পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেছি। যার কারনে সাড়ে তিন বছর পরিবারের সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। তাহলে আমি এত টাকা কি ভাবে দেব। সর্বশেষ কৌশলে পালিয়ে বাপের বাড়ীতে চলে এসেছি। আমি বিচার চাই, বিয়ের নামে আমার সাথে কেন প্রতারনা করেছে, আমাকে কেন ঠকালো। আমি আইনের সহযোগিতা চাই।
তবে অভিযুক্ত এরশাদের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে গবাদী পশু খামারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, এরশাদ ছাগলের ফার্মে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক চাকুরী করে। কিন্তু এখানে যারা ১৫/২০বছর পর্যন্ত সরকারী চাকুরী করে বয়স্ক মুরুব্বি তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে।পিতৃতুল্য ব্যক্তিদের গালিগালাজ পর্যন্ত করে। দৈনিক হাজিরার একজন অস্থায়ী কর্মচারী হয়ে এমন আচরন মানতে পারিনা। ছাগলের ফার্মের কর্মচারী হয়ে পুরো ডেইরী ফার্মের বেশিরভাগ কাজ নাবিল ফারাবি স্যার তার মাধ্যমে করে। যার কারনে সে কাউকে তোয়াক্কা করেনা। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন সুরাহা মেলেনি।
এ বিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ নাবিল ফারাবির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরশাদের সাথে কাজের সুবাদে আমার পরিচয়, দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় ধরে তাকে আমি চিনি এরমধ্যে সে আমার সাথে কোনরকম বেয়াদবি করে নাই, এমন কাজ সে করতে পারে বলে আমার মনে হয়না, তারপরেও আপনাদের মাধ্যমে যখন আমি জানতে পারলাম বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবিষয় বলেন, ভুক্তভোগীর মা অভিযোগ করেছে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।