UP election: জল্পনা কল্পনার অবসান, মিঠাপুকুরে নৌকা হারালেন ১৪ বর্তমান চেয়ারম্যান, মনোনয়ন ভাগাভাগি
মিঠাপুকুর প্রতিনিধি উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করায় সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটলেও চাঙা হয়ে উঠেছে গ্রুপ রাজনীতির আলোচনা।
আওয়ামী লীগের স্হানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড গত বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তালিকায় ১৭ জন বর্তমান চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩ জনের নাম রয়েছে। নৌকা প্রতীক হারিয়েছেন ১৪ জন বর্তমান চেয়ারম্যান। মনোনয়ন বঞ্চিতদের মাঝে কয়েকজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যানও রয়েছেন।যারা নিজ এলাকায় বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে উন্নয়ন ও সেবামুলক কাজকর্ম করে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।
গ্রুপ রাজনীতির গ্যারাকলে পড়ে নৌকা প্রতীক হাত ছাড়া হয়েছে বলে মনে করছেন তাদের কর্মী সমর্থকরা। পর্যবেক্ষকদের মতে স্হানীয় গ্রুপ রাজনীতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি ছিল আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের অগ্নি পরীক্ষা। সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার সমর্থীত দ্বিধা বিভক্ত দুই গ্রুপের কে কতজন মনোনয়ন পাবেন। কোন গ্রুপের কারা মনোনয়ন পেতে পারেন এই বিষয়টি নিয়ে সর্ব মহলে চলে আসছিল জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার এর জন্য এটি ছিল অগ্নি পরীক্ষা।এই পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে পাস করেছেন বলে মনে করছেন স্হানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
কারন গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের স্হানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড ঘোষিত তালিকায় ১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের অনুসারী প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন।
তাঁরা হলেন খোড়াগাছ ইউনিয়নের মাহবুবার রহমানবাবলু, ভাংনী ইউনিয়নের মোস্তাফিজার রহমান বুলু,লতিবপুর ইউনিয়নের নেয়ামুল হক মন্ডল, গোপালপুর ইউনিয়নের আশরাফ আলী আকন্দ, কাফ্রিখাল ইউনিয়নের খলিলুর রহমান রাজা,চেংমারী ইউনিয়নের মাহমুদুল নবী পাপুল ও বালারহাট ইউনিয়নের মাহবুবার রহমান লাভলু।।বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান নিরঞ্জন মহন্ত।
সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন রানী পুকুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঙ্গা, ময়েনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক, বড়বালা ইউনিয়নের হারুন অর রশীদ, মিলনপুর ইউনিয়নে আতিয়ার রহমান, দুর্গাপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার, বড় হযরত পুর ইউনিয়নে আব্দুল মতিন,মির্জাপুর ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেন মিলু চৌধুরী, ইমাদপুর ইউনিয়নে অনিল কুমার গাঙ্গুলী।
পায়রাবন্দ ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন মনোয়ারা বেগম মলি।তিনি কিভাবে নৌকা প্রতীক পেলেন এনিয়ে আলোচনা চলছে।বালুয়ামাসিমপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাইফুল ইসলাম লোটাস পাইকার। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলার তদবিরে মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
নৌকা বঞ্চিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে এলাকায় জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল কবীর টুটুল, খোড়াগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও মিলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম চৌধুরী। কিন্তু তারা গ্রুপ রাজনীতির গ্যারাকলে পড়ে হারালেন নৌকা প্রতীক।
অনুভূতি জানতে চাইলে মুঠো ফোনে মিলনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম চৌধুরী জানান ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ছিল না। ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
হালিম আরও জানান তার পরিবর্তে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে ৭২ ভোট পেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান হালিম চৌধুরী পুনরায় মনোনয়ন বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মনোনয়ন বঞ্চিত খোড়াগাছ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান গত ৫ বছরে তার এলাকার যে পরিমান উন্নয়ন হয়েছে। গত ২০ বছরেও তা হয়নি। তিনি জানান অন্য ইউনিয়নের লোকজন তার ইউনিয়ন দেখতে আসেন। তিনি তার ইউনিয়নের মনোনয়ন পুনরায় বিবেচনা করার জন্য মনোনয়ন বোর্ড প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মনোনয়ন বঞ্চিত চেংমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাউল কবীর টুটুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন বলে দাবি করেন। কোন কিছু মুল্যায়ন না করে তার ইউনিয়নে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং সততার মুল্যায়ন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রাজনীতির হিসাব নিকাশ করছেন। একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে যোগাযোগ করে মন্তব্য জানতে চাইলে সবাই মন্তব্য করা হতে বিরত থাকেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
পর্যবেক্ষকদের মতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাগাভাগির বিষয়টি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। কিছুটা হলেও চাঙা হয়ে উঠেছে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামীলীগের গ্রুপ রাজনীতি।